নিউবারাকপুর স্টেশানের পশ্চিম পাশে যে বাজারটা রোজ সকালে বসে, সেই বাজারে ঢোকার মুখেই একটা সিমেন্টের বস্তার উপরে কয়েক গোছা নানা রকমের শাক নিয়ে আর একটা বস্তার উপরে বসেন তিনি। বয়সের কোন হিসেব নেই। দেখলে মনে হয় ষাট পেরিয়েছে, তবে সত্তর বা তার বেশীও হতে পারে। আসলে এই শ্রেনীর লোকের বয়স বোঝা মুশকিল। কুড়িতে বুড়িয়ে যায়, চল্লিশকে ষাট মনে হয়। মাথার চুল গুলো সাদা, মুখে কুঞ্চিত বলিরেখার দাগগুলো স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। পরনের শাড়ি পুরানো, কিন্তু মলিন নয়। নীল পেড়ে সাদা শাড়ী, বিধবার পোষাক।
এমন কিছু থাকেনা দোকানে। পরিমানও বেশী নয়, কয়েক আটি হিঞ্চে, ঘাটখোলের কয়েকটা আটি, বর্ষাকালে জলের কলমী শাক কয়েক আটি, কখনো ডুমুরের ফল। আর প্রায়ই থাকে কচু শাক বা কচু গাছ। বোঝা যায়, এসব তার নিজের সংগ্রহ। বনে বাগানে ঘুরে ঘুরে এসব জোগাড় করে।
বাজারে ঢুকে বাজার করে ফেরার সময় নজরে পড়েই। এমন যায়গায় বসে, নজর না পড়ে উপায় নেই। প্রায়ই সবকিছু কেনা হয়ে গেলেও একবার সেখানে যাই। বলি, ‘দাও দু’আটি হিঞ্চে শাক’
বুড়ি একটা প্লাষ্টিকের ক্যারি-ব্যাগ বের করে। নতুন নয়, দোমড়ানো পুরানো ব্যাগ। তারপর হাতে দিয়ে বলে, ‘আট টাকা’
একটা দশ টাকার নোট দিয়ে বলি- ‘রাখো’। কিন্তু বুড়ি রাখেনা। দু’টাকা ফেরৎ দেবেই। বাধ্য হয়ে ফেরৎ নিতে হয়।
একবার অফিসের কাজে বেশ কয়েকদিন বাইরে ছিলাম। ফিরে বাজারে গিয়ে যেদিন বুড়ির কাছে দাঁড়িয়েছি, মুখ তুলে দেখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘বাবা, মেলাদিন দেখিনাই। শরীল ঠিক আছে তো?’