সে যাক। আমার মনে হলো, বুড়িতো এখন মুটামুটি ঠিক আছে। ওষুধ-পত্র দিচ্ছে সরকারী টিবি দপ্তর। পাঁচি নিজের মতো করেই দেখে। ওর জন্যেই বুড়ি বেঁচে আছে। আমারও আর এতটা মেলামেশা না করাই ভালো। বাড়িতেও মৌ এই নিয়ে মাঝে মধ্যেই অশান্তি করে। ঠিক করলাম আর বেশি যাবোনা। পাঁচিকে বলে এলাম, দরকারে আমার বাড়ি আসতে। এর মধ্যে সে দু’একবার এসেছে। বাড়ি চেনে। বুড়ি শুনে বলল, ‘ও ছেলে, এক দুইবার ঘুরে যেও’। বুড়ি এখন আমাকে আর বাবু বলেনা, ছেলে বলে।
আমিও তারপর অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বাজারেও তেমন যাইনা। মৌ যায়, এখন বাজার সে ই বেশী করে। এক সময় যেমন ওই বস্তিতে বার বার যেতাম, এখ না যেতে যেতে এবং দরকার মিটে যাওয়ায় সেখনে যাওয়াই হয়না। অনেকদিন ভেবেছি একবার যাওয়া দরকার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। বরং আমি ধীরে ধীরে সব ভুলে গেলাম।
এক রবিবার সকালে আমরা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি, এমন সময় সামনের গেট খুলে ঢুকলো পাঁচি আর তারার মা। পাঁচির হাতে একটা বাজারের ব্যাগ। মৌ পাঁচিকে চেনে, সে এক দু’বার এসেছে। কিন্তু তারার মাকে চেনেনা। আমি ওদের দেখে খানিকটা অবাকই হলাম। মৌএর দিকে তাকিয়ে দেখি, অপ্রসন্ন মুখ। ভাবছে আবার কিছু চাইতে এসেছে। আমিওযে সে কথা ভাবছিনা, তা নয়।
বুড়ির পরনে আজও সরু নীল পেড়ে সাদা শাড়ি। চেহারায় আর আগের মতো রুগ্ন ভাব নেই। মাথায় প্রায় সাদা চুলগুলো পরিপাটি করে আচড়ানো। তার চেহারায় এমনিতেই একটা ব্যক্তিত্বের আভাস আছে। পায়ে একটা হাওয়াই চটি।
বারান্দার সোফা দেখিয়ে বললাম, ‘বোসো। কেমন আছো?’ এতদিন তাকে তারার মা বলেছি। কিন্তু এখন কেন যেন তারারমা বলতে বাধে, আবার অন্য কিছু বলবো, তাও পারিনা। তাই ভাববাচ্যে কথা বলি।